এন্টিবায়োটিক, প্রেসার, ব্যথার ওষুধ, ও গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম আবার খালি পেটে ব্যথার ওষুধ খেলে কি হয়? মনে অনেক প্রশ্ন। প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো রোগ এ আক্রান্ত। বেঁচে থাকতে হলে আমাদের ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে ধারণা থাকা খুব জরুরী। যদি আপনি বা আপনার কোনো পরিবারের সদস্য রোগ এ ভুগছে কিন্তু ওষুধ খাওয়া সঠিক নিয়ম না জানে থাহলে রোগ না কমে আরো বাড়বে। তাই আমরা আপনাদের সাথে আমরা গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম, দুধ খাওয়ার কতক্ষণ পর ঔষধ খাওয়া উচিত, এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার নিয়ম, প্রেসারের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম, খালি পেটে ব্যথার ওষুধ খেলে কি হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ঔষধ সেবন নিয়ে ধারনা
আমরা যারা অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত দের বাদই দিলাম! যারা শিক্ষিত তবে সচেতন নয়, এমন অনেক পেশার লোক তো আছেই! এমনকি ঔষধের ব্যবসায় জরিত আছেন এমন অনেককেই দেখেছি ঔষধ সেবনের সঠিক নিয়ম মানছেননা।
এই জন্য অনেক ধরনের ঔষধই রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে। অর্থাৎ এই ঔষধটা আর কাজ করছেনা। এভাবে ঔষধের জেনারেশন পাল্টাতে পাল্টাতে একসময় ঔষধই হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমনটা হয়েছেও।নিয়ম না জানার কারনে, এমন অসহায়ত্ব অনেক দেখেছি। এমন সব বিষয় নিয়েই আজকের লেখা কোন ঔষধ কিভাবে সেবন করবেন?
গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম
গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। আপনি যদি সঠিক নিয়ম মেনে গ্যাসের ওষুধ সেবন করেন কার্যকারিতা বাড়ে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। আমরা সাধারনত দুই ধরনের গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাই।
১। এসিড ক্ষরণ বাধা প্রদানকারী। এগুলো আবার দুই ধরনের। Proton Pump Inhibitor (PPI) এবং H2 Blocker।
২। এসিড নিউট্রালাইজার যা সাধারণত অ্যান্টাসিড নামে পরিচিত
আমাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য সঠিক ঔষধ গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সাধারনত বিভিন্ন ঔষধ খেয়ে থাকি। আপনারা শিখে নিন গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের প্রকারভেদ এবং গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম।
কিছু জনপ্রিয় ওষুদের নামঃ
- ওমিপ্রাজল (Omeprazole)
- ইসোমিপ্রাজল (Esomeprazole)
- রেবিপ্রাজল (Rabeprazole)
- প্যানটোপ্রাজল (Pantoprazole)
- ল্যানোসোপ্রাজল (Lansoprazole)
PPI খাবারের আগে সাধারণত ৩০ মিনিট আগে বা কমপক্ষে ১০-১৫ মিনিট আগে খেতে হয়। PPI এবং H2 Blocker খাবারের আগে খেতে ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে তখন খাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য খাবারের আগে খেতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ফিটকিরি উপকারিতা ও অপকারিতা| ব্যবহারের নিয়ম
এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
এন্টিবায়োটিক অর্থাৎ ব্যাকটিরিয়া নাশক ঔষধ সেবনে, আমাদের দেশে অধিকাংশ রোগীই উদাসীন! যা ভয়াবহ ই বলতে পারেন।রোগী তো সে সব বিষয়ে রোগী! ঔষধ বিক্রেতাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে, যারা এখনও ভাল করে জানেনা, এন্টিবায়োটিক এর মাত্রা মিস করলে কি হতে পারে।বা নিয়মবহির্ভুত সেবনে অকালে জীবনটা শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই ঔষধ কেনার পুর্বে, ঔষধ বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিবেন, এন্টিবায়োটিক কোনটা। এবং ঐ ঔষধ পুর্নমাত্রার কিনে নিবেন (ফুল ডোজ)। যদি কোন কারনবশতঃ ঔষধ আর কিনতে না পারেন, তবে যেন এন্টিবায়োটিক মিস না হয়। আপনাকে ৬ ঘন্টা পরপর ৮ঘন্টা কিংবা ১২ ঘন্টা পরপর| মোট ৫/৭/১২/১৬ টা ডাক্তারেরা আপনাকে খেতে বলেছে আর আপনি কোনো সময় না মেনে সকাল, দুপুর, রাত না মেনে আপনার খুশি মতো সময় অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যাচ্ছেন।
কোর্স কমপ্লিট না হওয়া পর্যন্ত ঔষধ চালিয়ে যেতে হবে। যতক্ষন পর্যন্ত ডাক্তার নিষেধ না করেছেন। যদিও কয়েকটা ঔষধ খাওয়ার পরই আপনার রোগ সেরে যায়, তবুও এন্টিবায়োটিক কোর্স কমপ্লিট করতে হবে। যদি না করেন, এই ঔষধটা পরবর্তীতে এজাতীয় রোগের ক্ষেত্রে কাজ করবেনা। তাই ভুল করবেননা।অনেকেই ঔষধ বিক্রেতাকে দোষারোপ করেন, ঔষধ বিক্রয়ের জন্য নাকি একবস্তা ঔষধ দিয়ে এসব ধান্ধা করেন। হতে পারে, তবে এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ডাক্তারের কথায় শুরু করবেন, ডাক্তারের দেয়া সময় পর্যন্ত সেবন করবেন।
প্রেসারের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
ওষুধ গ্রহণে হেরফের হলে অনেক সময় প্রত্যাশিত ফল পাওয়া কঠিন হয়। তাই এ ব্যাপারে চারটি নিয়ম মানা খুব জরুরি। গবেষকরা বলছেন, প্রতিদিনের উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ ঘুমাতে যাবার আগে গ্রহণ করা হয় সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। অনেকেই অনিয়মিতভাবে ওষুধ খান। যেমন মাথা বা ঘাড় ব্যথা হলে বা খারাপ লাগলে একটা ওষুধ খেয়ে নেন কেউ কেউ। অথবা প্রেশার বাড়লে ওষুধ খান, স্বাভাবিক হলে খান না। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে প্রতিদিন একই নিয়মে একই মাত্রার ওষুধ খেতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কমবেশি হতে পারে, তা–ও চিকিৎসকের পরামর্শে। আপনি যদি নিয়মিত চিকিৎসা নিলে, জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে এ রোগ নিয়ে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব।
দুধ খাওয়ার কতক্ষণ পর ঔষধ খাওয়া উচিত
ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম এন্টিবায়োটিক সাথে দুধ খাওয়া উচিত নয় তা। সেকথা অনেকেই জানেন। তবে এবার জেনে নিন এমন আরো অনেক ওষুধ ও খাবারের কথা, যেগুলো একসাথে খেলে শরীরেরে উপকার না হয়ে ক্ষতিও হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মাথা থেকে অতিরিক্ত চিন্তা। নেগেটিভ, খারাপ চিন্তা দূর করার উপায়
খালি পেটে ব্যথার ওষুধ খেলে কি হয়
আমরা অনেকে কাজের বা অফিসে যাওয়া দেড়ি হলে কোনো কিছু না খেয়ে কাজে লেগে যাই। এইরকম করা ঠিক নয়। কেউ কেউ আবার সকালে খালি পেটে চা বা কফি খান এটাও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি কারণ। কিছু ওষুধ পাকস্থলীতে প্রথমে গিয়েই এসিডিটি তৈরি করে। আর সেখান থেকে দেখা দেয় নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিকিৎসকেরা তাই এই ওষুধগুলোকে ভরাপেটে সেবন করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। হঠাৎ করে যদি ব্যথা হয় ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু খালি পেটে ব্যথার ওষুধ খেকে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিছু না খেয়ে ব্যথার ওষুধ খেলে পেটের সমস্যাও হতে পারে।
আশা করছি, ঔষধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম| এন্টিবায়োটিক, প্রেসার ও গ্যাসের ঔষধ উপায় নিয়ে সঞ্জীবন বিস্তারিত বুঝাতে পেড়েছে। যদি কোন বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ বা জানতে চান নিচে কমেন্ট করতে পারেন।